পাখপাখালী দেশের রত্ম, আসুন সবাই করি যত্ম’ প্রতিপাদ্যে নানা আয়োজনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এ মেলা শুরু হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় দুপুর দেড়টার দিকে। বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন জাবি উপাচার্য অধ্যপক নূরুল আলম।
মেলায় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখির আলোকচিত্র ও পত্রপত্রিকা প্রদর্শনী, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখিচেনা প্রতিযোগিতা এবং সবার জন্য উন্মুক্ত পাখিবিষয়ক কুইজের আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা পাখি যে লেকগুলোতে বসে আমরা সেখানে কাটাতাঁরের বেড়া দিয়েছি। কিন্তু এখন কাটাতাঁরের বেড়া নেই বললেই চলে। এগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে, ভেঙে ফেলা হয়েছে। কেন এত কাছে গিয়ে পাখি দেখতে হবে? একটু দূরে থেকেও তো পাখিগুলো দেখা যায়। কিন্তু আমরা এই নিয়মগুলো মানি না।
উপাচার্য আরও বলেন, আমরা পাখিদেরকে বিরক্ত করি। আমরা রাতের বেলা অনুষ্ঠান করতে না করেছি। বলেছি সন্ধ্যার আগেই অনুষ্ঠানগুলো শেষ করবেন, কিন্তু এই অনুষ্ঠান অনেক সময় চলতে চলতে রাত ১০-১১টা বেজে যায়। অনুষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের আতশবাজি ফোটানো হয়। ফলে পাখি ভয়ে এই এলাকাটা ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারে পাখি আছে। আপনাদের সেখানে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সেখানে গেলে সেখানকার পাখিগুলোও চলে যাবে। তখন জাহাঙ্গীরনগর পুরাই পাখিশূন্য হয়ে যাবে। সেটা আমাদের জন্য হবে কষ্টদায়ক এবং পীড়াদায়ক।
মেলার আহ্বায়ক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, ২০০১ সাল থেকে এ মেলা হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ২ বছর করোনার কারণে মেলা করা সম্ভব হয়নি। পাখি সংরক্ষণে দেশবাসীকে সচেতন করতেই এ মেলা। আমরা হয়তো দেশব্যাপী অনুষ্ঠানটি করতে পারবো না, তবে আমাদের বার্তাটি পুরো দেশবাসীর জন্যই। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাখি একটি অন্যবদ্য সৃষ্টি, পাখি না থাকলে প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষা হবে না।
মেলায় ঘুরতে আসা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নুরুন্নাহার বলেন, যখন শুনেছি জাহাঙ্গীরনগরে পাখি মেলা হবে, তখন থেকেই পরিকল্পনা করেছি যে আসবো। নাতিকে নিয়ে প্রথমবারের মতো মেলায় এসেছি। মেলায় এসে খুবই ভালো লেগেছে। স্বচক্ষে পাখি দেখার ইচ্ছা নিয়েই এখানে এসেছি। জানি না দেখতে পারবো কিনা। কেবল মেলায় ঢুকলাম। এরপর লেক পাড়ে যাব পাখি দেখতে।
পাখি সংরক্ষণে অবদান রাখায় সাঈদ হোসাইন, শাওন দেব এবং এএসএম আরিফ উল আনামকে ‘বিগ বার্ড বাংলাদেশ’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে অধ্যাপক এএনএম আমিনুর রহমান, অনলাইন ক্যাটাগরিতে হৃদয় দেবনাথ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে কেফায়েত উল্লাহ চেীধুরীকে ‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। সায়েন্টিফিক পাবলিকেশ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন অর্ণব সাহা এবং তার দল।