বগুড়ার দুটি আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট দিতে কেন্দ্রে গেলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থার মুখোমুখির হতে হবে বিএনপির নেতাকর্মীদের। এজন্য ভোট দিতে কেন্দ্র না যেতে বিএনপি ভোটারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে নির্দেশ অমান্য করে কেন্দ্রে গেলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) কেন্দ্র থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল।
তিনি বলেন, উপ-নির্বাচনে আমাদের দলের কোনো নেতাকর্মী কারও পক্ষে ভোট করছে কি-না সে বিষয়ে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। বিএনপির ভোটাররা কোনো প্রলোভনে পড়ে ভোটকেন্দ্রে যায় কি-না কেন্দ্রের নির্দেশে সে বিষয়েও নজরদারি করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়াকে বিএনপি তাদের দুর্গ বলে দাবি করে থাকে। সব নির্বাচনে বিএনপি এ জেলায় ভোট পায় রেকর্ড পরিমাণ। ভোট পর্যালোচনা করে দেখা যায় অন্য দলের চেয়ে বিএনপির ভোট বগুড়া-৬ (সদর), বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম), বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) ও বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে সবচেয়ে বেশি। সদর ও কাহালু-নন্দীগ্রাম আসনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে আসছে দলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে।
৪ ও ৬ আসনে যাকেই বিএনপি সমর্থন দেয় তিনিই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিপুল ভোটে। এবার বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসন দুটি দখলে নিতে বিভিন্ন দলের মোট ২০ প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে আছেন।
এদিকে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী পদত্যাগ করা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যদের সমর্থন চেয়েছিলেন। কিন্তু তা কাউকে সমর্থন দেননি বলে জানা গেছে। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কেউ কেউ জামায়াতের সমর্থন পাবে মনে করেছিলেন। সে ক্ষেত্রেও তাদের আশায় গুড়েবালি হয়েছে। কারণ জামায়াতও প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি।
বগুড়া-৪ আসনে সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান জুয়েল (কুড়াল) এবং বগুড়া-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে (ট্রাক) জামায়াত সমর্থন দিয়েছে এমনটা শোনা গেলেও জামায়াতের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হচ্ছে।
বগুড়া শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, জামায়াত কেয়ারটেকার ছাড়া নির্বাচন করবে না। অন্য কাউকে উপ-নির্বাচনে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
বগুড়া-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা সরকার বাদল বলছেন তাকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে গোপনে।
তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা জাগো নিউজকে বলেন, অনেকেই সুবিধা নেওয়ার জন্য বিএনপির নাম ভাঙার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের দলের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার। কাউকে সমর্থন দেওয়া দূরের থাক, দুই আসনে বিএনপির কেউ ভোট কেন্দ্রে গেলে সেই এলাকার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাদের এ সিদ্ধান্ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ কি-না জানতে চাইলে হেনা বলেন, ‘আমরা ভোটে নাই। তাই আইন কানুন মানার প্রশ্নও নাই।
রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কোনো ভোটারকে আটকে রাখার সুযোগ নেই। ভোট হবে বাধাহীন। কোনো দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের কার্যকলাপের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়া-৪ আসনে পদত্যাগ করা বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন জাগো নিউজেক বলেন, এটি একটি তামাশার নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপি নেই। তাহলে বিএনপি অন্য কাউকে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দু-একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সমর্থনের জন্য নানা মাধ্যমে প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করেছি।
একই কথা বলেন বগুড়া-৬ আসনের পদত্যাগ করা সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কোনো কাজ করি না। বিএনপি বৃহৎ দল। এ দলের ছায়ায় থাকার জন্য অনেকে চেষ্টা করতে পারে কিন্তু সফল হবে না। কারণ বিএনপি পরিক্ষিতদের মূল্যায়ন করে থাকে। চাইলেই কেউ সমর্থন পাবে না।