আমি প্রায়ই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ হবার ও তাদের সাথে আলাপচারিতা করার স্বপ্ন দেখি, হঠাৎ করে মিহায়েল এভারিয়ানিচের কথা থামিয়ে দিয়ে সে বলল। আমার পিতা আমাকে খুবই উন্নতমানের শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সের চিন্তাভাবনার প্রভাবে আমি ডাক্তারি পড়াশুনা করেছিলাম। আমার বিশ্বাস সেই সময়ে যদি তার কথা না শুনতাম, তাহলে বর্তমানে আমি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের কেন্দ্রে অবস্থান করতাম। সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা ছিল আমার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। আমি জানি যে বুদ্ধিবৃত্তিও ক্ষণকালীন, চিরস্থায়ী কিছু নয়, কিন্তু তারপরও আমি এর পক্ষপাতিত্ব করি।
কারণ, জীবন হলো একটা বিরক্তিকর ফাঁদ। একজন চিন্তাশীল মানুষ যখন পরিপক্কতা লাভ ও বুঝতে পারার সক্ষমতা অর্জন করে, তখন সে এটাও বুঝতে পারে যে এই ফাঁদ থেকে তার পালানোর কোনো পথ নেই এবং তার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই জীবনের আকস্মিক ঘটনাগুলো তখন তার মধ্যে ভিন্নতর বোধের সৃষ্টি করে। প্রতিটি চিন্তাশীল মানুষই চেষ্টা করে থাকে জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্যকে খুঁজে পেতে। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই তা সে পায় না, বরং অনিশ্চয়তা এসে তার জীবনে ভর করে। এই অনিশ্চয়তা হতে উত্তরণের জন্যেও সে সেটির দ্বারে বারবার করাঘাত করতে থাকে, কিন্তু কখনোই তা খোলে না; বরং তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে মৃত্যু চলে আসে।
ফলাফলটা হয় জেলের বন্দিদের মতো। তারা যেমনকরে সাধারণ দুর্ভাগ্যের সূত্রে গ্রথিত হয়েও নিজেদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, তেমনি করে চিন্তাশীল মানুষেরাও জীবনের ফাঁদকে অনুভব করতে অসমর্থ হয়। কারণ, তখন সে বিশ্লেষণ ও সরলীকরণের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ অন্যসব চিন্তাশীল মানুষদের সাথে মিলিত হয়ে পরস্পরের সাথে গর্বিত ও মুক্তচিন্তার বিনিময় করে সময়কে উপভোগ করতে থাকে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বুদ্ধিবৃত্তি আসলে এমন এক আনন্দের উৎস, যাকে কোনোকিছুই প্রতিস্থাপন করতে পারে না।”